দুবাই সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো জানার পর আপনার চোখ ছানাবড়া হয়ে যেতে পারে। মাছধরার গ্রাম থেকে কীভাবে বিশতমতম ব্যয়বহুল শহর হিসাবে তৈরি হয়। এটা আসলেই আশ্চর্যের বিষয়।
দুবাইকে বলা যায় ইতিহাস সৃষ্টির দেশ। প্রতি বছরই দুবাই কোন না কোন রেকর্ড গড়ে তুলেছে, বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন থেকে শুরু করে সাততারকা হোটেল, কোনটির জন্য এই দেশ আলোচনায় নেই! কিন্তু দুবাই নিয়ে কিছু মজাদার তথ্য রয়েছে, যা আপনি হয়তো জানেন না। ইতোমধ্যে আমরা সিঙ্গাপুর সম্পর্কে অজানা তথ্য নিয়ে একটি লেখা দিয়েছি। চাইলে পড়ে আসতে পারেন।
দুবাই সম্পর্কে অজানা তথ্য
প্রথমে আপনাকে পয়েন্ট আকারে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হল,
- দুবাইয়ের রাস্তা ঘাটে এসি থাকে। মানে গরমের কোন কারবার নাই। তবে, এসি ছাড়া, এখানকার তাপমাত্র ১২০ ডিগ্রি পর্যন্তু হয়। ভাবা যায়?
- দুনিয়ার সবচেয়ে উচুতে টেনিস মাঠ।
- বিলাশ বহুল ঘাড়ি-বাড়িতে ভরপুর।
- বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ্যাকুরিয়াম।
- অন্য দেশে যখন কুকুর বিড়াল লালন পালন করে, দুবাইয়ে তখন বাঘ-সিংহ লালন পালন করে।
গরিবদের জন্য ফ্রি খাবার। দুবাই সম্পর্কে অজানা তথ্যটি কি জানতেন? আরও কিছু দুবাই সম্পর্কে অজানা তথ্য আপনাদের জানাচ্ছি। চলুন শুরু করা যাক।
১. তারুণ্যের শহর
১৭০০ এর দশকের গোড়ার দিকে, দুবাই কেবল মাছ ধরার এবং মুক্তা চাষ করার জন্য একটি ছোট গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল।
অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে, প্রায় ১,২০০ জন লোক এখানে বসবাস করত। কিন্তু এখন দুবাইয়ের অবস্থা অনেকটা এগিয়ে গেছে, এখন দুবাইয়ের জনসংখ্যা ৩.৩ মিলিয়ন। সেভাবে চিন্তা করলে একটি অগ্রগতির নগরী হিসেবে দুবাইয়ের বয়স বেশি নয়। এটি একটি তরুণ শহর।
২. পাখির স্বর্গ
পাখি প্রেমীদের জন্য এটি একটি রোমাঞ্চকর খবর যে, ৩২০ টি প্রজাতিরও বেশি পাখি রয়েছে। যা দুবাই হয়ে ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশে পর্যন্ত যায়।
বিশেষ করে শীত এবং বসন্তের সময় ঈগল, স্যান্ডপাইপার এবং বড় বড় বক চোখে পড়ে। এইখানে আপনি বাজপাখি এবং ঈগল পাখির খেলা উপভোগ করার মত ও সুযোগ পাবেন। এইখানে এছাড়া ও বাজপাখির সাফারি পার্ক ও দেখতে পাবেন।
৩. উচ্চতম বিল্ডিং
এইখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম ভবন বুর্জ খলিফা, যার উচ্চতা ২, ৭১৬ ফুট, এই বিষয়ে কোন ভুমিকার প্রয়োজন নেই। এটি দুবাই স্কাইলাইনের একটি আইকন। কখনো দুবাই গেলে বুর্জ খলিফা অবশ্যই ঘুরে আসবেন।

একটি মজার বিষয় হল যে বিল্ডিংয়ের নকশাটি একটি স্থানীয় মরুভূমির ফুলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা হাইমেনোকালিস, বা স্পাইডার লিলি নামেও পরিচিত।
৪. কসমোপলিটান রান্না
দুবাই বাণিজ্যকেন্দ্র হওয়ার দরুন এর রন্ধন প্রণালীতে সব দেশের খাবারের প্রভাব রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী আরবি খাবারের পাশাপাশি, আপনি ভারতীয় মশলা, পারস্যের বিভিন্ন উপাদান, এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় ফ্লেভার পাবেন।
আপনি ইচ্ছা করলে একটি ফুড ট্যুর দিয়ে আসতে পারেন, আপনি ঐতিহ্যবাহী ইমিরাতস ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে রোম্যান্টিক সন্ধ্যায় বেদুঈন ক্যাম্পে স্পেশাল ডিনার ও করতে পারবেন।
৫. সমৃদ্ধশালী আর্ট
বার্ষিক আন্তর্জাতিক শিল্প মেলাতে, দুবাইয়ে যে আর্টগুলো প্রদর্শিত হয়, তাতে মধ্য প্রাচ্য, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং অস্ট্রেলেশিয়ার শিল্পীদের ধাঁচ লক্ষ করা যায়। এই কাটিং এডজ ইভেন্টটি সমসাময়িক শিল্পকর্মগুলিকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে মেলবন্ধন করে।
দুবাইয়ের ডিজাইন ডিস্ট্রিক্টে গেলে ওইখানকার গ্যালারীগুলোতে আপনি স্থানীয় এবং দোকানগুলি অন্বেষণ করতে, অথবা স্থানীয় দৃশ্যে কী ঘটছে তা দেখতে পাবেন। আপনি আলসেরকার এভিনিউতেও ভ্রমণ করতে পারেন।
৬. রোবট জকি
দুবাইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলির মধ্যে একটি হল উট রেসিং। তবে এখন বাচ্চাদেরকে উটের পিঠে চরানোর বদলে ছোট ছোট রোবটদের জকি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আপনি মরুভূমিতে উট রাইড অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করার জন্য যেতে পারেন। আপনি রোমাঞ্চিত হবেন।
৭. কফি মিউজিয়াম
কফি প্রেমীদের জন্য এটি একটি সুখবর। আপনি যে আপনার প্রিয় পানীয় দিয়ে দিন শুরু করেন তার ইতিহাস সম্পর্কে অবশ্যই জানতে ইচ্ছা করে, দুবাই আপনাকে সেই বেবস্থা করে দিয়েছে সাথে আপনি পাচ্ছেন অসাধারণ কফি।

এছাড়া আপনি পাচ্ছেন কফি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আর সাথে ঐতিহ্যের স্বাদের জন্য, আপনি বেদুইন কফি আচারে অংশ নিতে পারেন।
৮. ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট
দুবাই একটি ঐতিহাসিক শহর এবং একই সাথে এটি গ্ল্যামারের আবেদনপূর্ণ একটি নির্দেশন। আপনি দুবাই যান, আল ফাহিদি হিস্টোরিক্যাল পাড়ার ছোট ছোট গলিতে হাঁটুন এবং যাদুঘর, গ্যালারী ঘুরে ঘুরে দেখুন এবং স্থানীয় খাবার গুলো খেয়ে দেখুন, বুঝতে পারবেন।
আপনি এমনকি ঐতিহ্যবাহী আবরা নৌকায় ভ্রমণ ও করতে পারেন। এরকম চিত্তাকর্ষক এলাকায় দুবাই সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে একটি স্থানীয় গাইড সাথে রেখে ট্যুর দিন।
৯. খেজুরগাছের দ্বীপ
দুবাইয়ের পাম বা খেজুর গাছের দ্বীপ বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ। এই কৃত্রিম দ্বীপগুলি কেবল বালি এবং পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, এটি সমুদ্রতল থেকে ৩ বিলিয়ন ঘনফুট বালি এবং আশে পাশের পর্বতমালা থেকে প্রায় ৭ মিলিয়ন টন শিলা সংগ্রহ করেছিল।

এটি দেখার জন্য একটি জেট স্কি রাইড নিন বা রোমাঞ্চকর ট্যান্ডেম স্কাইডাইভিং করুন, বুঝতে পারবেন দ্বীপপুঞ্জ কত সুন্দর।
১০. দীর্ঘতম স্বয়ংক্রিয় মেট্রো লাইন
আপনি একবার দুবাই গিয়ে দেখুন গর্ব করে বলতে পারবেন যে আপনি বিশ্বের দীর্ঘতম স্বয়ংক্রিয় মেট্রো লাইনে ভ্রমণ করেছেন। এইখানে দুই লাইন আছে একটি হল লাল লাইন যা ৩২.৩৭ মাইল দীর্ঘ এবং আরেকটি হল সবুজ লাইন যা ১৩.৯৮ মাইল দীর্ঘ । এই মেট্রো রেল ঘোরা মানে হল আপনি গ্রিনিচ বুক রেকর্ড করে ফেলেছেন।
দুবাই অভিজাত ভ্রমণ শহর হিসেবে, বিশ্বের ভ্রমন প্রেমীদের জন্য স্বপ্নের শহর। এখানে, আপনি বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জের মতো অসংখ্য প্রকৌশল প্রকল্পের, একটি অবিশ্বাস্য পরিকল্পনা দেখতে পাবেন।
পরিশেষে
আশা করি আপনারা দুবাই সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলি পেয়ে রোমাঞ্চিত হয়েছেন। দুবাইয়ের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি ইসলামী ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত যা আরব আমিরাতের নাগরিকের জীবনধারাকে অনেকটা ফুটিয়ে তোলে।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে যখন পর্যটকরা দুবাই ভ্রমণ করে তখন তাদের অবশ্যই দুবাইয়ের সংস্কৃতিকে সম্মান করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করতে হবে, কারণ আমিরাতবাসীরা তাদের ইসলামী সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে খুব প্রতিরক্ষামূলক।
দুবাই মধ্য প্রাচ্যের বিনোদনের রাজধানী হিসাবে পরিচিত যা সারা বিশ্ব থেকে অনেক ভ্রমণ প্রেমীদের আকর্ষণ করে, বিশেষ করে যারা শহরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থানগুলিতে ভ্রমণ করার জন্য যথেষ্ট ধনী। তাহলে, আপনার যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে দুবাই ঘুরে আসতে পারেন। ঘুরতে না জান তবে জানতে তো দোষ নেই।