বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট এবং ভিসা প্রয়োজন। আমরা অনেকেই ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করি কিন্তু ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম জানি না। আসলে, বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা ছাড়া আপনি বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন না বা প্রবেশাধিকার পেতে পারবেন না।
পাসপোর্ট ছাড়া, দেশের সীমানাও অতিক্রম করতে পারবেন না। পাসপোর্ট অন্যান্য দেশকে দেখায় যে, আপনি আপনার নির্দিষ্ট দেশের একজন আইনী নাগরিক। অপরদিকে ভিসা হল অন্য ধরণের নথি, যা মানুষকে অন্যান্য দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
ভিসা এবং পাসপোর্টের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হ’ল: একটি ভিসা নির্দিষ্ট কারণ নির্দিষ্ট করে কেন ব্যক্তিটি দেশে যাচ্ছেন এবং তিনি যে সময় অবস্থান করছেন বা তিনি থাকতে পারেন তা নির্দিষ্ট করে।
সাধারণত, যারা বিদেশে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন বা নির্বাচিত সময়ের জন্য কোন দেশের স্কুলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য ভিসা মঞ্জুর করা হয়। প্রতিটি ভিসার জন্য একটি সময়সীমা রয়েছে এবং মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে লোকেরা সেই সময় বাড়াতে পারে।
লেখার সূচিপত্র
ই পাসপোর্ট কি বাংলাদেশে শুরু হয়েছে?
২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার ই-পাসপোর্ট ইস্যু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। ই-পাসপোর্ট পাসপোর্ট ধারকদের জন্য অভিবাসন, ভ্রমণ এবং ভিসা পদ্ধতি সহজ করে। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন করলে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ যারা ই-পাসপোর্ট চালু করেছে।
বার্লিন/ঢাকা, ২০ জানুয়ারি ২০২০ – রাজধানী ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ২২ শে জানুয়ারী আধুনিক ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জন্য একটি নতুন ব্যক্তিগতকরণ ও ইস্যু কেন্দ্র চালু করেছে। নতুন ইপাসপোর্টগুলির জন্য এখন আবেদন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে পাসপোর্টের ধরন
বাংলাদেশের সরকার তিন ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করে। তারা হল:
সাধারণ পাসপোর্ট: এই ধরনের পাসপোর্টে সবুজ আবরণ রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের সাধারণ নিয়মিত নাগরিকদের এগুলি জারি করা হয়
সরকারী পাসপোর্ট: এই ধরনের পাসপোর্টে নীল আবরণ রয়েছে এবং এগুলি বাংলাদেশের সরকারী কর্মচারী, সরকারী কর্মকর্তা এবং সরকারী ব্যবসায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের প্রদান করা হয়।
কূটনৈতিক পাসপোর্ট: এই ধরনের পাসপোর্টে লাল আবরণ রয়েছে এবং এগুলি বাংলাদেশী কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা এবং কূটনৈতিক কুরিয়ারদের দেওয়া হয়।
ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন করার কয়েকটি নিয়ম তো আছেই। তার সাথে সাথে এর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। ই-পাসপোর্ট পেতে আপনাকে এই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। তারা হল:
- আপনার অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকতে হবে।
- নতুন পাসপোর্টের জন্য আপনাকে সম্পূর্ণ পাসপোর্ট ফর্মের দুটি কপি জমা দিতে হবে।
- ২ পাসপোর্ট সাইজ ছবি কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাই করতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম প্রশংসাপত্রের ফটোকপি লাগবে।
- পেমেন্ট স্লিপ।
- প্রযোজ্য হলে প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তিগত প্রশংসাপত্রের (যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) নিশ্চিত ফটোকপি দিতে হবে।
- প্রযোজ্য হলে সংশ্লিষ্ট জিও/এনওসি দাখিল করতে হবে।
বাংলাদেশে কিভাবে ই-পাসপোর্ট করবেন ?
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা খুব সহজ। এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:
ধাপ 1: আপনার এলাকায় নতুন ই-পাসপোর্ট অফিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
ধাপ 2: অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করুন। নিচের লিংকে ক্লিক করলে আবেদন ফরম পাবেন।
ধাপ 3: পাসপোর্ট ফি প্রদান করুন
পাসপোর্ট ফি
পুস্তিকার প্রকার | মেয়াদ | বিতরণের ধরন |
নিয়মিত ৪৮ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | ৪,০২৫ টাকা |
৪৮ পৃষ্ঠা | ১০ বছর | ৫,৭৫০ টাকা |
৬৪ পৃষ্ঠা | ৫ বছর | ৬,৩২৫ টাকা |
ধাপ 4: বায়োমেট্রিক তালিকাভুক্তির জন্য পাসপোর্ট অফিসে যান
ধাপ 5: ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন
অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম?
আপনি সহজেই অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করতে পারেন। নিচের সহজ পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:
- প্রথমে অভিবাসন ও পাসপোর্ট অফিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান: https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status
- এখন আপনার Online Registration ID বা Application ID প্রদান করুন। এইগুলো আপনি অনলাইনে আবেদন করার পর যে ফরমটা পেয়েছেন ঐখানে পেয়ে যাবেন।
- এখন আপনার জন্ম তারিখ সরবরাহ করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার জন্মতারিখ টি আপনার পাসপোর্ট ফর্মে সরবরাহ করার মতো একই।
- এখন ক্যাপচা টাইপ করুন এবং Check বাটন টি টিপুন।
- আপনি আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা দেখতে পাবেন।
পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা
Divisional Passport and Visa Office,Building-02E-7, Sher-E-Bangla Nagor,Agargaon, Dhaka-1207Contact No: +880 2-8123788
কিভাবে অনলাইনে ভিসা চেক করবেন ?
আজকাল, আপনি সহজেই অনলাইনে ভিসা চেক করতে পারেন। এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:
- প্রথমত, ভিজিটের দেশের অফিসিয়াল ভিসা ওয়েবসাইট দেখুন।
বিভিন্ন দেশের ভিসা চেক করার ওয়েবসাইট:
- সৌদি আরব – https://enjazit.com.sa
- কাতার – https://portal.moi.gov.qa/wps/portal/MOIInternet/services/inquiries/visaservices/enquiryandprinting
- দুবাই – https://smartservices.icp.gov.ae/echannels/web/client/default.html#/fileValidity
- কানাডা – https://www.canada.ca/en/services/immigration-citizenship.html
- কুয়েত – https://kuwaitvisa.com/online-visa-check
- সিঙ্গাপুর – https://wponline.mom.gov.sg/WPOLOMController
- ভারত – https://passtrack.net
- U.A.E – https://www.visahq.com/united-arab-emirates
- এখন আপনি আপনার ভিসা আবেদনের স্থিতি কোথায় ট্র্যাক করতে পারেন সেই বিকল্পটি সন্ধান করুন।
- এখন স্বীকৃতি নম্বর বা পাসপোর্ট নম্বর লিখুন ।
- এখন আপনার জন্ম তারিখ সরবরাহ করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার জন্মতারিখ টি আপনার পাসপোর্টে সরবরাহ করা একই।
- এখন ক্যাপচা কোডটি লিখুন এবং ‘জমা দিন’ ক্লিক করুন।
- আপনার ভিসা আবেদনের বিস্তারিত ওয়েবপৃষ্ঠায় প্রদর্শিত হবে।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
পূরণ কৃত এমআরপি অনলাইন আবেদন ফরম (বার কোড সহ) মুদ্রিত কপি। ০১ (এক) সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ফটোগ্রাফ কপি করুন। বিদ্যমান বৈধ বাংলাদেশ পাসপোর্টের ফটোকপির ০১ (এক) সেট (১-৫ পৃষ্ঠা) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা ডিজিটাল জন্ম সনদের ফটোকপি করুন।
পরিশেষে
আমি আশা করি ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে , এবং আপনি ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন। আপনি যদি মনে করেন যে এটি তাদের সাহায্য করতে পারে তবে এই নিবন্ধটি আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।