নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছে তারা বুঝে উঠতে পারছেনা, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন? কিভাবে দক্ষতা অর্জন করবেন? আয় করা ডলার ওইথড্র কি দিয়ে করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
আজ আমি আপনাদের না বলা মনের প্রশ্নগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা দিবো ইনশাল্লাহ। এতে কাজটি কিভাবে শুরু করবেন? কি কি লাগবে? কি যোগ্যতা দরকার? কিভাবে পেমেন্ট নিবেন? ইত্যাদি তার পরিষ্কার ধারণা হয়ে যাবে।
লেখার সূচিপত্র
ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন?
ফ্রিলেন্সিং একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক কাজ। আপনার অবশ্যই একটি ল্যাপটপ/ ডেস্কটপ এবং তাতে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হবে। এরপর প্রয়োজন আপনার কাজ করার দক্ষতা। ফ্রিলেন্সিং-এ অনেকগুলো সেক্টর রয়েছে যেমন: গ্রাফিক ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, এনিমেশন, এডিটর, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
কোনটা নিয়ে কাজ করবেন তা বুঝে উঠতে না পারেন তাহলে, ফ্রিলেন্সিং প্লাটফর্মগুলোতে রিসার্চ করে দেখতে পারেন কোনটি বেশী পপুলার এবং কাজ বেশী। সেটির উপর নিজেকে দক্ষ করে তুলন। এর জন্য পারসোনাল টিউটর অথবা অনলাইন/ অফলাইন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হতে পারেন।
তার আগে যে বিষয়টি সিলেক্ট করেছেন সেটি নিয়ে ইউটিউবে কয়েকটা ভিডিও দেখুন। তারপর বুঝে নিন আপনি কিসের উপর কাজ করতে চাচ্ছেন। তারপরও আমার নিজস্ব রিসার্চের মতামতও জানাচ্ছি, ফ্রিলেন্সিং জগতে আমার রিসার্চ অনুযায়ী এ কাজগুলোর চাহিদা সবথেকে বেশী বর্তমানে ,
- Web Development
- Graphic Design
- Content Writing
- Search engine optimizing
- Affiliate Marketing
এ ছাড়া আরও কাজ রয়েছে,
- Academic Writer
- 3D Artist
- Advertising Copywrite
- Accountant
- App developer
- Artist
- Blog Writer
- Book Designer
- Book Editor
- Business writer
- C Programmer
- Bookkeeper
- Copy Editor
- Creative Director
- Php Developer
- Fashion Designer
- Concept Artist
- Industrial Design
- Film Editor
- Health Writer
- Magazine Writer
- Personal Online Assistant
- Legal Writer
- Book Cover Designer
- Science Editor
- Creative Writer
- Engineering
- Advertiser
১. ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট
যদি প্রশ্ন করেন, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন? তাহলে প্রথম উত্তর হলো:
- ল্যাপটপ/কম্পিউটার
- ইন্টারনেট
এই ২টি জিনিস থাকলেই যথেষ্ট। এখন প্রশ্ন হলো, ডেস্কটপ কম্পিউটার নাকি ল্যাপটপ! আপনার লক্ষ্য যদি হয়, ডিজিটাল মার্কেটিং কিংবা ওয়েব ডিজাইনের মত কাজ তাহলে ল্যাপটপ কেনটাই বেটার। কেননা ল্যাপট কিনলে আপনি বেশ অনেকগুলো সুবিধা পাচ্ছেন:
- লোডশেডিংয়ের সময় কাজ করার সুবিধা
- ওয়েবক্যামের সুবিধা
- মাইক্রোফোন ও স্পিকারের সুবিধা
- যেকোন জায়গায় বসে কাজ করার সুবিধা
আর আপনি যদি ভারী কাজ যেমন: ভিডিও এডিটিং, এনিমেশন, গ্রাফিক্সের কাজ করেন তাহলে, ডেস্কটপ নেয়াটা বেটার। তবে বাজেট বেশী থাকলে এসব ক্ষেত্রে আপনি বেশী দামে, ভাল কনফিগারেশনের ল্যাপটপ কিনতে পারেন। মজার বিষয় হলো, ডেস্কটপ আপনি কম খরচে ভাল কনফিগারেশনের পেয়ে যাবেন।
ডেস্কটপ কেনার পর আপনাকে অতিরিক্ত কিছু জিনিস কিনতে হতে পারে। এটা আপনার কাজের উপর নির্ভরশীল। যথা:
- মাইক্রোফোন
- স্পিকার অথবা হেডফোন
- ওয়েবক্যাম
- চেয়ার ও টেবিল
২. দক্ষতা বা স্কিল
প্রথমত যে কোনও একটি বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হবে। আপনি যেভাবে বা যেখানেই কাজ করুন না কেন, আপনার কাজের নিখুঁত দক্ষতা না থাকে, তবে কেউই আপনাকে কাজ দিবে না। যদি কোনোভাবে কাজ পেয়েও যান দক্ষতা ছাড়া মনে রাখবেন, তা বেশীদিন টিকবে না। তাই, ফ্রিলেন্সিং এ পা রাখার নিজেকে দক্ষ করে তুলন, অন্তত একটি কাজে। ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি লেখাটি পড়ে আগে আইডিয়া নিন। তারপর ঐ দক্ষতাটি অর্জন করে ফেলুন।
প্রশিক্ষণ নিতে পারেন যেকোন প্রতিষ্ঠান হতে কিংবা ইউটিউব হতে ফ্রিতে ভিডিও দেখে। বড় বড় টপ রেটেড ফ্রিলেন্সাররা নিজেরা ঘেঁটে এবং ইউটিউবের মতো ফ্রি প্লাটর্ফম হতে কাজ শিখেছেন। একবার-দুইবার কাজ পেলে তা ভালোভাবে করতে পারলে এরপর কাজ পাওয়া তেমন কোনও ব্যাপার না।
দ্বিতীয়ত ইংরেজিতে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। সাধারণত ফ্রিলেন্সিং মর্কেটপ্লেসের বেশীরভাগ কাজই বাহিরের দেশের বায়াররা দিয়ে থাকেন। ডলার ইনকামের লক্ষ্য থাকলে ইংরেজি জানা অত্যাবশ্যক। তা না হলে আপনার কমিউনিকেশনে বাঁধা আসবে এবং কাজ পাবেন না।
৩. নিজের আকর্ষণীয় পোর্টফলিও
একটি পারফেক্ট আকর্ষণীয় প্রফেশনাল পোর্টফলিও আপনার কাজের দক্ষতা প্রকাশ করবে। বায়াররা আপনার প্রফেশনাল পোর্টফলিও দেখেই আপনার পেশাগত মান বুঝে নিবেন। মানে, আপনি যে কাজ পরেন, এটা বুঝাবেন কিভাবে? সেক্ষেত্রে আপনি কিছু ডেমো কাজ করে প্রোটফলিও সাইটগুলোতে আপলোড করে রাখতে পারেন।
Online portfolio দু,ভাবে বানানো যায়,
- ডোমেইন ও হোস্ট কিনে নিজের নামে ওয়েবসাইট বানিয়ে।
- Behance, Github, Dribbble, Flickr, Coroflot ইত্যাদি সাইটে আপনি ফ্রিতে আপনার প্রোজেক্ট ও ফাইল আপলোড করে রাখতে পারেন।
এ বিষয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখে প্রথমে ভালো করে বুঝে নিন, কি কি তথ্য আপনর এড করতে হবে। তারপর বানিয়ে ফেলুন নিজের প্রফেশনাল আকর্ষণীয় একটি পোর্টফলিও।
৪. ফ্রিলেন্সিংর কাজ খোঁজা
ফ্রিলেন্সিং কাজের বায়াররা বিভিন্ন জায়গায় পোস্ট করে, থাকেন ফ্রিলেন্সারদের হায়ার করার জন্য। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত গ্রুপগুলোতে খুজে পাবেন এবং নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইট বা প্লাটফরম রয়েছে যেগুলোতে এ ধরনের কাজগুলো পাওয়া যায়।
প্লাটফরমগুলো হলো,
এমন আরও অনেক মার্কেট প্লেস রয়েছে অনলাইনে।
৫. ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকা উত্তোলন
অনলাইন বা ইন্টারনেট কিন্তু তেমন নিরাপদ জায়গা নয়। যেখানে সামনাসামনিই অনেক মানুষ ধোঁকা দিয়ে বসে। আপনি যদি পেমেন্ট সম্পর্কে না বুঝেন আপনাকে বোকা বানিয়ে ফেলবে। আর আপনার পরিশ্রম হয়ে যাবে অযথায় খাটুনী। সে কারণেই পারিশ্রমিকের বিষয়টি পরিষ্কার জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- পেমেন্ট পাওয়ার জন্য অবশ্যই ব্যাংক সবথেকে নিরাপদ এবং সহজ প্রাপ্য একটি ব্যবস্থা। কিন্তু কিছু মার্কেটপ্লেসে ব্যাংক ট্রানজেকশন সিস্টেম থাকে না। সেসব জায়গায় অনলাইন পে করে থাকে। কিন্তু এই প্রসেসে ২- ৩ সাপ্তাহ লেগে যায়।
- অবশ্য যারা নিয়মিত বায়ার বা ক্লায়েন্ট তারা এতো রকম ঝামেলায় না গিয়ে ইমেইলে কাজ প্রদান করে, কাজ শেষে ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট ট্রানজেকশন করে দেন। কিন্তু এর জন্য আপনাকে নিজের কাজের উপর প্রচুর দক্ষ এবং টাইম মেনেজমেন্ট সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে খুবই। তা না হলে একজন বায়ারকে কখনোই পার্মানেন্ট ক্লায়েন্টে পরিণত করতে পারবেন না।
- এ ছাড়া Paypal, Payonner, Wise এর মাধ্যমে আপনার প্রাপ্য পারিশ্রমিক নিতে পারবেন।
৬. একজন টপ রে-টেড ফ্রিলেন্সার হতে কি করতে হবে
আপনার কাজ করার দক্ষতা রয়েছে কিন্তু তা প্রকাশওতো করতে হবে, তা না হলে বায়ার কিভাবে আপনাকে খুজে পাবেন? fiverr কিভাবে কাজ করে? লেখাটি একবার পড়ে নিতে পারেন।
টপ রে-টেড ফ্রিলেন্সার হতে হলে, আপনাকে বেশ কিছু জিনিসই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। তার মধ্যে সবথেকে প্রয়োজনীয় আপনার বিড। বায়ার যাতে আপনাকে হায়ার করে তার জন্য আপনি যে বিড করবেন তা এমন হতে হবে যেনো বায়ার আপনার প্রোফাইল দেখে বুঝতে পারে আপনাকে দিয়েই তাদের কাজটি হবে।
যে কারণে আপনার ফ্রিলেন্সিং প্রোফাইল হতে হবে চমৎকার, যাতে ক্লায়েন্ট প্রথম দেখাতেই আগ্রহ প্রকাশ করেন আপনাকে হায়ার করার জন্য। বিভিন্ন মার্কেট প্লেস ঘুরে বুঝুন কেমন প্রোফাইল তৈরি করা দরকার, ক্লায়েন্টদের চাহিদা অনুযায়ী।
যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে চমৎকার প্রোফাইল বানাতে,
- ফ্রিলেন্সিং এর ক্ষেএে যে কোনও একটি বিষয়ে প্রচুর দক্ষ হতে হবে। এবং তা উল্লেখ থাকতে হবে।
- আপনি যে বিষয়ে এক্সপার্ট সে বিষয়ে কয়েকটি কাজ করে প্রোফাইলে এড করে রাখতে হবে। যেমন: আপনি যদি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে থাকেন আপনি প্রোফাইলে আপনার পূর্ব কাজ এর লিংক এড করুন।
- ফ্রিলেন্সিং জনপ্রিয় মার্কেট প্লেস গুলোতে স্কিল টেস্ট থাকে। সেগুলোতে অংশগ্রহণ করুন এতে আপনার প্রোফাইল অনেক স্ট্রং দেখাবে।
- আপনার প্রোফাইল ফিলেন্সিং মার্কেট প্লেস বাদেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। এতে আপনার পরিচিতি বাড়বে।
যে কাজই পান চেষ্টা করবেন যেনো নিখুঁত করে কাজটি শেষ করতে পারেন। এতে আপনার প্রথম ক্লায়েন্ট পরবর্তী কাজও আপনাকে দিয়েই করাবেন। আপনার রেটিং বৃদ্ধি পাবে।
পরিশেষে
আশা করি এখন ধারণা পেয়ে গিয়েছেন, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন? সুতরাং, উপরিউক্ত নিয়ম-কানুনগুলো অনুসরণ করে নিজেকে দক্ষ করে তুলুন।