মোবাইল ফোন ছাড়া আমাদের চলেই না। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনযাত্রা এত সহজ করে দিয়েছে যে আমরা আজ যে কোন জায়গায় বসে দূর দূরান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছি এই মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে?
কি উপায়ে এটি দ্বারা যেকোন স্থানে যোগাযোগ করা যায়। আজ আমরা জানব কিভাবে মোবাইল ফোন কাজ করে। মোবাইল ফোন কাজ করে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে।
আমরা যখন যাই করি না কেন যেমন যখন ঘরে বসে থাকি, বাইরে হাঁটি, বাসে বা ট্রেনে ভ্রমণ করি সব সময়ই আমরা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিও ওয়েভের সমুদ্রে বিচরণ করি। তড়িৎ এবং চুম্বকের একটি অদৃশ্য তরঙ্গ এটি যার গতি আলোর গতির ন্যায় ৩০০০০০ কিলোমিটার পার সেকেন্ড।
মোবাইল ফোনের গতি এখন বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন। যাইহোক, মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে, এ সম্পর্কে নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। লেখাটি মনোযোগ সহকারে পরলে, মোবাইল ফোনের কাজ করার প্রক্রিয়া বুঝে যাবেন।
মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে?
মোবাইল ফোনের সেলুলার সিস্টেম। এটি ব্যাপক পরিমান তরঙ্গদৈর্ঘ্য তৈরি করে, যার ফলে একসাথে অনেক লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারে। এই সেলুলার সিস্টেমের অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে যেমন,
- ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি,
- শক্তি অপচয় রোধ করা,
- এরিয়া কভারেজ বৃদ্ধি,
- প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ইত্যাদি।
একটি মোবাইল ফোন সাধারণত দ্বিমুখী বেতারযন্ত্র। এতে একদিকে থাকে বেতার প্রেরক ও বেতার গ্রাহক। যখন মোবাইল ফোন দিয়ে কারও সাথে কথা বলা হয় তখন এটি সেই শব্দকে ইলেকট্রিক সিগন্যালে রূপান্তরিত করে। যেটি বেতার তরঙ্গ বা রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে নিকটস্থ মোবাইল টাওয়ারে গিয়ে পৌঁছায়।
মোবাইল টাওয়ারের নেটওয়ার্ক এই তরঙ্গকে অপর প্রান্তে থাকা গ্রাহকের কাছে পাঠায় যেটি এই ইলেকট্রিক সিগন্যালকে পুনরায় শব্দে পরিণত করে। এটাই মূলত মোবাইল ফোনের কাজ।

আরও পড়ুন: মোবাইল টাওয়ার কিভাবে কাজ করে?
যখন একটি ফোন কল করা হয় তখন প্রথমেই মোবাইল ফোনটি তার নিকটস্থ স্টেশনের এন্টেনার সাথে যোগযোগ করে এবং সেখানের অপারেটর একটি বেতার সংযোগ স্থাপন করে দেয়। ফোন কল রিসিভ করার সময় ও একই ঘটনা ঘটে থাকে।
ব্যতিক্রম শুধুমাত্র এক্ষেত্রে স্টেশনটি সংযোগ রক্ষা করে থাকে। একটি মোবাইল থেকে কল প্রেরণ ও গ্রহণ করার জন্য মোবাইল অপারেটরকে এর অবস্থান সম্পর্কে জানতে হয়। এই কারণেই যখন কোন মোবাইল থেকে ফোন কল না ও করা হয় বা শুধুমাত্র ফোন অন থাকলে ও সেই ফোনের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়।
এই মোবাইল ফোনে কথা বলার আরো একটি চমৎকার সুবিধা রয়েছে। আমরা জেনেছি যে, কথা বলার সময় এটি নিকটস্থ মোবাইল টাওয়ারে যোগাযোগ করে থাকে। কিন্তু আমরা যখন কথা বলতে বলতে স্থান পরিবর্তন করতে থাকি তখন সেই টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ দুর্বল হতে থাকে এবং কথা বলা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এইজন্য মোবাইল ক্রমাগত নিকটস্থ টাওয়ারের দূরত্ব পরিমাপ করতে থাকে। আমরা যখন কথা বলতে বলতে স্থান পরিবর্তন করি তখন সাথে সাথে এটিও মোবাইল টাওয়ার পরিবর্তন করে থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং সংযোগ অবিচ্ছিন্ন রাখে।
প্রথমে মোবাইল ফোন শুধুমাত্র কথা বলার জন্য তৈরি করা হয়। আস্তে আস্তে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এতে সংযুক্ত হয়। এখন মোবাইল দিয়ে কথা বলা থেকে শুরু করে মেসেজ দেয়া, ইমেইল পাঠানো, ইন্টারনেট ব্যবহার, গেমস, ভিডিও করা, রেকর্ডিং, ছবি তোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ করা যায়। আবার অনেক আধুনিক মোবাইল ফোন এখন বহনযোগ্য ছোট কম্পিউটারের মতো কাজ করে থাকে।
মোবাইল ফোন বেতার তরঙ্গকে যেকোন দিকে বহন করতে পারে। এই তরঙ্গ নিকটস্থ মোবাইল টাওয়ারে পৌঁছানোর আগে আশেপাশের বিভিন্ন বস্তু দ্বারা শোষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ আমরা যখন মোবাইলে কথা বলার সময় বা কল করার সময় এটিকে মাথার আশেপাশে স্থাপন করি তখন আমাদের শরীরের কিছু অংশ এই নির্গত রশ্মি শোষণ করে থাকে।
এছাড়া, সব ধরনের মোবাইল ফোনেই এন্টেনা থাকে যার সাহায্যে এটি ইলেকট্রিক সিগন্যালকে বেতার তরঙ্গে পরিণত করতে পারে। সব ফোনেই কমপক্ষে একটি হলেও এন্টেনা থাকবে যার সাহায্যে সে বেতার তরঙ্গ প্রেরণ ও গ্রহণ করতে পারে।
তবে কিছু কিছু মোবাইল ফোনে একের অধিক এন্টেনা ও থাকে। এই এন্টেনা হচ্ছে কপারের তৈরি এক ধরনের ধাতব বস্তু যা একটি নির্দিষ্ট আকারের হয়ে থাকে এবং নির্দিষ্ট তরঙ্গ গ্রহণ ও প্রেরণ করতে পারে।
পূর্বের মোবাইল ফোনগুলোতে এই এন্টেনা বাইরে থাকত কিন্তু আধুনিক ফোনগুলোতে এন্টেনা ফোনের ভিতরে থাকে। আধুনিক মোবাইল ফোনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের এন্টেনা থাকে যেমন সেলুলার এন্টেনা ছাড়াও এতে থাকে ওয়াইফাই, ব্লু টুথ এবং জিপিএস এন্টেনা।
মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় এর সিগন্যাল যেন শক্তিশালী থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ সিগন্যাল খারাপ হলে ফোনের ব্যাটারির ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। মূলত, মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে, এটাই এর ব্যাখ্যা। এখন আপনার মোবাইল স্লো হলে, মোবাইল স্লো হলে কি করব? লেখাটি পড়তে পারেন।
মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

আশা করি, মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে এটা বুঝে গিয়েছেন। একটি মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য বলতে বুঝায় সেই ফোনের ক্ষমতা, তার সেবাসমূহ তার এপ্লিকেশনসমূহ ইত্যাদি। এর উপর ভিত্তি করেই একটি ফোনের প্রতি গ্রাহক আকৃষ্ট হয়ে থাকে। একটি মোবাইল ফোনে সাধারনত যেসব উপাদান থাকে।
- একটি সেমিকন্ডাকটর ইনটিগ্রেটেড চিপ বা সংক্ষেপে আইসি চিপ।
- একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি।
- একটি ইনপুট মেকানিজম সিস্টেম যার সাহায্যে ফোনে কমান্ড দেয়া যায়। সাধারনত এটি হয়ে থাকে কিপ্যাড বা টাচস্ক্রিন।
- সাধারন মোবাইল ফোন সার্ভিস যার দ্বারা ফোন কল বা মেসেজ আদান প্রদান করা যায়।
মোবাইল ফোন সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে। GSM এবং CDMA। GSM হ্যান্ডসেট গুলোতে সিম কার্ড স্লট থাকে কিন্তু CDMA হ্যান্ডসেটগুলোতে সিম কার্ড স্লট থাকে না।
GSM পদ্ধতিটি বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কারণ এতে সিম কার্ড স্লট থাকে এবং গ্রাহক চাইলেই তা যেকোন সময় পরিবর্তন করতে পারে যা CDMA হ্যান্ডসেটগুলোতে করা যায় না। এছাড়া সিম কার্ড ও সহজলভ্য তাই সবাই GSM হ্যান্ডসেট পছন্দ করে থাকে।
মোবাইল ফোনের যত্ন
মোবাইল ফোনের কার্যক্ষমতা এর যত্নের উপর নির্ভর করে।
- মোবাইল ফোন কখনো ভেজা স্থানে রাখা উচিত নয় এবং ভেজা হাতে স্পর্শ করাও উচিত নয়। কারণ এতে মোবাইলের ভেতরের যন্ত্রাংশগুলোর ক্ষতি হতে পারে যা ঠিক করা সম্ভব নাও হতে পারে।
- ফোনের উপর ভারী কিছু স্থাপন করা ঠিক নয় এতে ডিসপ্লে নষ্ট হতে পারে।
- তাপ উৎপাদনকারী কোন যন্ত্রের কাছে মোবাইল রাখা ঠিক নয়।
- ব্যাটারী অতিরিক্ত চার্জ দেয়া ঠিক নয়। মোবাইলের চার্জ যখন ৫০% এর নিচে থাকবে তখনই শুধুমাত্র চার্জ দেয়া উচিত এবং ১০০% চার্জ পূরণ হবার আগে তা খোলা উচিত নয় কানেকশন থেকে। মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার 10 টি উপায়।
উপসংহার
মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে, এই বিষয়টি আশা করি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এখন যদি আপনার মনে, ওয়াইফাই নিয়ে প্রশ্ন আসে তাহলে, WiFi কি? WiFi কিভাবে কাজ করে লেখাটি পড়তে পারেন।