যেকোন ধরনের পণ্য কিনতে গেলে পণ্যের মোড়কের গায়ে আমরা অদ্ভুত এক রকম ডিজাইন দেখতে পাই যেখানে কালো কালিতে আঁকা কিছু বর্গাকার বক্স ও কিছু ডট চিহ্ন থাকে। এটি QR Code নামে পরিচিত। যদিও অনেকেই জানি না, qr কোড কিভাবে কাজ করে?
আসলে QR Code হলো Quick Response code যা খুব সহজেই মোবাইলের মাধ্যমে পড়ার উপযোগী হয়। একটা QR Code এ অনেক ধরনের তথ্য থাকে যা দিয়ে আমরা সেই পণ্য সম্পর্কে বা কোম্পানি সম্পর্কে বা জিনিসটি সম্পর্কে বিশদ জানতে পারি।
লেখার সূচিপত্র
QR Code কিভাবে কাজ করে?
এটি সাধারনত বার কোডের মতো কাজ করে থাকে। এটা এমন এক ধরনের ছবি যা মেশিন দিয়ে স্ক্যান করা যায় এবং স্মার্টফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে, খুব সহজে এটি পড়া যায়।
প্রতিটি QR Code কিছু কালো রঙের কিছু সংখ্যক বর্গাকার বক্স ও কিছু ডট বহন করে থাকে, যাতে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য দেয়া থাকে। যখন স্মার্টফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে সেটি স্ক্যান করা হয়, তখন এটি সেই তথ্যকে মানুষের বুঝার উপযোগী করে উপস্থাপন করে থাকে।
QR Code মূলত এক ধরনের ডাটা। এই ডাটা হতে পারে আলফানিউমেরিক, নিউমেরিক, বাইনারি বা কানজি। (কানজি এক ধরনের জাপানিজ হরফ। আধুনিক লিখন পদ্ধতিতে এটি এখন জাপানে ব্যবহৃত হচ্ছে।)
QR Code কিভাবে কাজ করে তার কলাকৌশল বলার চেয়েও এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ শুধু স্মার্টফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করেই এটি সম্পর্কে জানতে পারছে।
- আরও পড়ুন: প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে?
QR Code এর অংশবিশেষ
QR Code এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ নিচে দেওয়া হলো
1. Data Module
QR Code এ এটি একটি প্রধান অংশ। এটি সাধারনত কালো বর্গগুচ্ছ যা সাদা ছবির উপর থাকে। যদিও রঙ এবং রঙের ধরন আলাদা থাকে। তবে একটি QR Code এ অবশ্যই সাদার উপর কালো বর্গ থাকতে হবে। এক কালো বর্গগুচ্ছ দিয়েই একটি QR Code এর বেশির ভাগ অংশ তৈরি হয়ে থাকে।
2. Position Pattern
প্রতিটি QR Code এ তিনটি Position Pattern থাকে। এই QR Code এ একটি ভেতরের এবং একটি বাইরের চোখ থাকে যা দিয়ে স্ক্যানার এবং ক্যামেরা খুব দ্রুত এবং সঠিকভাবে ডাটা মডিউল ও স্ক্যানিং নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
- আরও পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার কিভাবে কাজ করে?
3. Quiet Zone
এটা হচ্ছে এক ধরনের ফাঁকা জায়গা যা ডাটা মডিউল ম্যাট্রিক্স এবং সব Position Pattern ধারন করে থাকে। এটা স্ক্যানার এবং রিডার কে বুঝতে সাহায্য করে যে, একটি QR Code কোথা থেকে শুরু হয়েছে এবং কোথায় শেষ হয়েছে।
QR Code এর ভার্সন
একটি QR Code তার ভার্সন অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। QR Code এর সব মিলিয়ে ৪০ টা পৃথক পৃথক ভার্সন রয়েছে। এই ভার্সনগুলো নাম্বার দিয়ে সবগুলো একটা থেকে আরেকটা আলা্দা করা। একটি QR Code এ যত বেশি মডিউল থাকে তার ধারন ক্ষমতাও তত বেশি থাকে। ১ নাম্বার ভার্সনের ২১ টি মডিউল রয়েছে। ভার্সন নাম্বার ৪০ এর রয়েছে ১৭৭টি মডিউল।
QR Code এ কি কি তথ্য থাকে
একটি QR Code সাধারনত তিন ধরনের তথ্য জমা রাখে। এগুলো হলো size, error correction level and data type
Size
একটি QR Code সাধারনত সর্বোচ্চ ১৭৭টি রো ও কলাম সমন্বয়ে গঠিত। যেটা ৩১৩২৯ টি ডাটা মডিউল তৈরি করতে পারে। বেশির ভাগ QR Code এত বড় নয়। একটি ছোট QR Code এ ২১ টি রো ও ২১ টি কলাম থাকতে পারে যেটা ভার্সন ১। আবার ভার্সন ২ এ থাকে ২৫ টি রো ও ২৫ টি কলাম। সবচেয়ে বড় ভার্সন হলো ৪০ যা বহন করে ১৭৭ টি রো ও কলাম।
Error Correction Level
একটি QR Code এ ৪ ধরনের Error Correction Level ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলোর প্রতিটির আলাদা আলাদা ব্যাকআপ ডাটা যুক্ত করার ক্ষমতা থাকে যা নির্ভর করে QR Code ঠিক কি পরিমান ক্ষতির স্বীকার হয়েছে এবং একে কতটা সংশোধন করতে হবে।
- Level L – Upto 7% damage
- Level M – Upto 15% damage
- Level Q – Upto 25 % damage
- Level H – Upto 30% damage
Data Type
একটি QR Code সাধারনত ৭০৮৯ পর্যন্ত নিউমেরিক ক্যারেক্টার অথবা ২৯৫৩ পর্যন্ত আলফা নিউমেরিক ক্যারেক্টার ধারন করতে পারে। একইসাথে তারা বাইটস এবং কানজিও ধারণ করতে পারে। তার মানে একটি QR Code একসাথে যেকোন কিছু ব্যবহার করতে পারে যেমন সংখ্যা, বর্ণ, যতি চিহ্ন, সংকেত ইত্যাদি।
QR Code এর ধরন
QR Code সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে। স্ট্যাটিক এবং ডায়নামিক। স্ট্যাটিক QR Code স্থিতিশীল। এর মানে এটি একবার গঠিত হয়ে গেলে তা আর পরিবর্তন করা যায় না। স্ট্যাটিক QR Code দেখার জন্য কোন ইন্টারনেট সংযোগ দরকার হয়না। ডায়নামিক QR Code একটি ওয়েবসাইটের সাথে সংযোগ করা থাকে। যেটা যেকোন সময় পরিবর্তন করা যায় বা আপডেট করা যায় যতবার ইচ্ছা তত বার।
QR Code এর ধারনক্ষমতা
একটি QR Code এর ধারনক্ষমতা সাধারনত এর ভার্সন, এর এরর কানেকশন এবং এর ডাটা টাইপের উপর নির্ভর করে। এটি চার প্রকার হয়ে থাকে।
- আলফা নিউমেরিক- এতে ৪২৯৬ টি পর্যন্ত ক্যারেক্টার থাকতে পারে
- নিউমেরিক- এতে ৭০৮৯টি পর্যন্ত ক্যারেক্টার থাকতে পারে
- বাইনারি- এতে ২৯৫৩ টি পর্যন্ত ক্যারেক্টার থাকতে পারে
- কানজি- এতে ১৮১৭টি পর্যন্ত ক্যারেক্টার থাকতে পারে
QR Code কিভাবে স্ক্যান করতে হবে
QR Code স্ক্যান করার জন্য দুইটা জিনিস লাগবে। একটি হলো ক্যামেরা এবং অপরটি হলো স্ক্যানার অ্যাপ। স্মার্টফোনে খুব সহজেই প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ইন্সটল করা যায়। তবে আধুনিক স্মার্টফোনে আগে থেকে এই স্ক্যানার ইন্সটল করা থাকে। স্ক্যানার ওপেন করে মোবাইলের ক্যামেরাটি QR Code এর উপর ধরলেই এটি এর মধ্যে থাকা তথ্য উপস্থাপন করবে।
- আরও পড়ুন: আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে?
QR Code এর ব্যবহার
একটি QR Code এর ব্যবহার অনেক।
- ব্যবসায়ীরা এটি তাদের বিজনেস কার্ডে ব্যবহার করতে পারেন। যাতে করে কোড স্ক্যান করলে সহজেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণী উপস্থিত হবে।
- যেকোন পণ্যের গায়ে এই QR Code থাকে। এতে পণ্যের প্যাকেজিং সহ আরো কিছু তথ্য দেয়া থাকে।
- বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও এটি ব্যবহার করতে পারে। হাসপাতাল থেকে সেবা নেয়া বিভিন্ন রোগীদের মতামত ও রিভিউ থাকবে এতে। তাতে অনলাইন বুকিং এর বেলায় খুব সহজেই বাকিরা সেই হাসপাতালে সেবা নিতে আগ্রহী হবে।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে QR Code কিভাবে কাজ করে এই নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। আশা করি এই লেখার মাধ্যমে, বুঝতে পেরেছেন, qr কোড কিভাবে কাজ করে? না বুঝলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।