প্রচন্ড গরমে আমাদের রক্ষা করে থাকে এয়ার কন্ডিশন। এটি গরম তাপমাত্রা ঘরের বাইরে বের করে দেয় এবং ঘরকে শীতল করে তোলে। কিন্তু কথা হলো, এয়ার কন্ডিশনার কিভাবে কাজ করে?
এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই কাজটি করার জন্য অনেকগুলো যন্ত্র একসাথে কাজ করে থাকে। এবং এই শীতলের কাজ করার প্রক্রিয়াটিও ভিন্ন হয়ে থাকে।
লেখার সূচিপত্র
এয়ার কন্ডিশনার কিভাবে কাজ করে
এয়ার কন্ডিশন দুইভাবে কাজ করে থাকে।
- কেন্দ্রীয় শীতলীকরণ প্রক্রিয়া
- বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়া
কেন্দ্রীয় শীতলীকরণ প্রক্রিয়া ও তারবিহীন বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়া দুইভাবেই ঘরকে শীতল করা যায় এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করে। তবে এই দুইটার কাজ করার ধরন আলাদা।
কেন্দ্রীয় শীতলীকরণ প্রক্রিয়া
এটা এমনভাবে তৈরি করা যাতে পুরো ঘর একসাথে শীতল করা যায়। এই পদ্ধতিতে এক ধরনের পাইপের সাহায্যে প্রতি ঘরে শীতল বাতাস প্রবাহিত করা হয়। এই ধরনের এয়ার কন্ডিশনের দুইটা ভাগ থাকে।
একটা ঘরের বাইরে থাকে এবং অপরটি থাকে ঘরের ভিতরে। দুইটি পার্ট সংযুক্ত থাকে কপার টিউবের মাধ্যমে। এই ধরনের এয়ার কন্ডিশন বেশি জায়গা দখল করে থাকে কারণ এটি সম্পূর্ণ ঘর শীতল করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
একটি ক্ষুদ্র আকারের সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনের ওজন ও প্রায় ১.৫ টন হয়ে থাকে। এই ধরনের একটি এয়ার কন্ডিশন এর কার্যকরী ক্ষমতার অনুপাত হয়ে থাকে ২২।
এটা দিয়ে একটি এয়ার কন্ডিশন এর শক্তি পরিমাপ করা হয়ে থাকে যে এটি শীতকাল বা বসন্তকাল বা গ্রীষ্মকালে ঘরকে ঠিক কতমাত্রায় শীতল করতে পারবে। এই ধরনের এয়ার কন্ডিশন ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল বেশি হয়ে থাকে।
তারবিহীন বা পাইপবিহীন বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়া
এই পদ্ধতি পুরো ঘর একসাথে শীতলীকরণ না হয়ে যেকোন একটা কক্ষ বা ঘরের যে কোন একটা অংশ শীতল করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় শীতলীকরন প্রক্রিয়া থেকে এটি একেবারেই আলাদা।
এর মধ্যে কেন্দ্রীয় শীতলীকরন প্রক্রিয়ার মতো ঘরের ভেতর ও বাইরে কোন অংশ থাকেনা। তবে এটিতেও ইনডোর ও আউটডোর সিস্টেম থাকে। এটি কেন্দ্রীয় শীতলীকরন প্রক্রিয়ার মতো কোন পাইপের সাহায্যে সারা ঘরে শীতল বাতাস প্রবাহিত করে না।
এয়ার কন্ডিশন এর ঘরের ভিতরের ও বাইরের যন্ত্রাংশের অনুপাত যখন ১:১ থাকে তখন তাকে বলে মিনি স্প্লিট( স্প্লিট মানে বিভক্তিকরণ )। আর যখন যন্ত্রাংশের অনুপাত ১:১ এর বেশি হয় তখন তাকে বলে মাল্টি স্প্লিট।
কারণ মাল্টি স্প্লিট পদ্ধতিতে ছোট ছোট অংশ শীতল করা হয়ে থাকে। এর ওজন হয়ে থাকে প্রায় .৭৫ টন। এই ধরনের একটি এয়ার কন্ডিশন এর কার্যকরী ক্ষমতার অনুপাত হয়ে থাকে ৩৩। ঘর ঠান্ডা করার ক্ষমতা এর বেশি হয়ে থাকে। এটি ক্রয়খরচ ও কম এবং এটি ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচ ও সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।

এয়ার কন্ডিশনার এর ধরণ
কোন ধরনের এয়ার কন্ডিশনার ঘরের জন্য উপযুক্ত তা বুঝার জন্য এয়ার কন্ডিশনার এর বিভিন্ন প্রকারগুলো জানা থাকা জরুরি।
১. সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার
এ বিষয়ে আমরা আগেই বলেছি যে এটি পুরো ঘর শীতল করতে ব্যবহৃত হয়। এর দুটি অংশ থাকে। একটি ঘরের ভিতর ও আরেকটি ঘরের বাইরে। ঘরের ভিতরের অংশের সাথে বাইরের অংশটি একটি পাইপের সাহায্যে যুক্ত থাকে যা ঘরের ভিতরের গরম বাতাস বাইরে প্রবাহিত করে দেয়।
২. প্যাকেজড এয়ার কন্ডিশনার
এটিও এক ধরনের সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার। এটিও পুরো ঘর শীতল করে থাকে কিন্তু এটি অন্যগুলো থেকে আলাদা কারন এতে ১:১ এ কোন যন্ত্রাংশ থাকেনা। এর শুধু একটি অংশ থাকে যেটি ঘরের বাইরে থাকে।
এটি তাদের জন্য বিশেষ উপযোগী যারা একটি সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার পছন্দ করে কিন্তু জায়গার অভাবে ঘরের ভিতর ইনডোর অংশটি রাখতে পারে না।
৩. ডুয়েল ফুয়েল সিস্টেম
এই পদ্ধতিতে নিজেদের প্রয়োজন ও ইচ্ছামত ঘরের তাপমাত্রা গরম ও ঠান্ডা করা যায়। এতে একটি হিট পাম্প থাকে যেটি দিয়ে গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে প্রয়োজন মতো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৪. ডাক্টলেস (পাইপ বিহীন ) মিনি স্প্লিট
এই এয়ার কন্ডিশনটি একটি রুম শীতলীকরন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। যারা একক ভাবে ব্যবহার করতে চায় অর্থাৎ শুধুমাত্র নিজের শোবার ঘর বা বসার ঘর তারা এটি খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। অথবা স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরাও তাদের থাকার জায়গায় এটি ব্যবহার করতে পারবে। এই ধরনের এয়ার কন্ডিশনার দেয়ালেও স্থাপন করা যায় এবং মেঝেতেও রাখা যায়। তবে দেয়ালে স্থাপন করার সময় একটু উঁচুতে স্থাপন করলে ঘর ভালো ঠান্ডা হবে। আর মেঝেতে রাখতে এয়ার কন্ডিশনার এর যত কাছে থাকবে তত বেশি ঠান্ডা লাগবে।
৫. ডাক্টলেস (পাইপ বিহীন ) মাল্টি স্প্লিট
এটাও ডাক্টলেস মিনি স্প্লিট এর মতো। তবে এর পার্থক্য হচ্ছে এটি মিনি স্প্লিট এর মতো ১:১ না অর্থাৎ এতে ইনডোর ও আউটডোর অংশ একটি করে নয়। এতে অনুপাত হচ্ছে ১:৫। অর্থাৎ এটি এক সাথে ৫টি কক্ষ ঠান্ডা করতে পারে।
আরও পড়ুন: আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে।
এটার একটি সমস্যা হচ্ছে আলাদা আলাদা রুমের জন্য আলাদা করে যন্ত্রাংশ কেনার জন্য এর ব্যয় একটু বেশি হয় তবে সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার থেকে এটি বেশি কাজ করে এবং এর বিদ্যুৎ খরচ ও কম হয়।
৬. উইন্ডো এয়ার কন্ডিশনার
জানালার পাশে থাকে বলে এটির এই নামকরণ করা হয়েছে। এটিও একটি রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার কাজে ব্যবহৃত হয় কিন্তু এটি স্থাপন করতে হয় সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার এর মতো। জানালার ভিতরে এর অর্ধেক অংশ থাকে এবং বাকি অর্ধেক থাকে বাইরে।
এটি বেশি শব্দ তৈরি করে এবং দেখতে ও অদ্ভুত লাগে। তবে এটি সহজে পরিচালনা করা যায় এবং খরচও কম।
এয়ার কন্ডিশন এর উপাদানসমূহ
এয়ার কন্ডিশন এর প্রধান প্রধান যন্ত্রাংশগুলি নিম্নরূপ।
থার্মোস্ট্যাট

এর সাহায্যে শীতলীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখানে দুটি থার্মোস্ট্যাট থাকে। একটি ইলেকট্রনিক এবং একটি ইলেকট্রোমেকানিক্যাল। প্রথমটি ঘরের তাপমাত্রা পড়ে আর দ্বিতীয়টি ঘর ঠান্ডা শুরু করার সময় বলে দেয়।
রেফ্রিজারেন্ট

এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্রাংশ। এটি ছাড়া সমস্ত সিস্টেম অচল। এর মধ্য দিয়েই বাতাস ঠান্ডা করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ইভাপোরেটর কয়েল

এখানে গরম বাতাস শোষিত হয়ে থাকে।
কমপ্রেসর
ইভাপোরেটর কয়েল দ্বার গরম বাতাস শোষিত হবার পর এটি কমপ্রেসরে প্রবেশ করে থাকে।
কনডেনসার কয়েল
এটি গরম বাতাসকে বাইরে বের করে দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। বাইরে বের হবার সময় এটি পানি হয়ে বের হয়।
এক্সপেনসন ভালব
ইভাপোরেটর কয়েল এর মধ্য দিয়ে অত্যধিক চাপে বার বার গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে রেফ্রিজারেন্ট গরম হয়ে যায়। এর হাত থেকে বাচাতে এক্সপেনসন ভালব ব্যবহৃত হয়। এক্সপেনসন ভালব রেফ্রিজারেন্ট কে পুনরায় ঠান্ডা হতে সাহায্য করে।
উপসংহার
আশা করি এয়ার কন্ডিশনার কিভাবে কাজ করে এই সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন নেই। যদি থাকে তাহলে, কমেন্ট করে জানাতে পারেন।