আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, প্রিন্টারের নাম শুনেছেন? সবাই বলবেন, অবশ্যই, এইটা না চেনার কি আছে! কিন্তু যদি বলি, প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে?
আসলে প্রিন্টার আমরা সবাই চিনি ও এর কাজ সম্পর্কে জানি। কোন ডকুমেন্ট যখন আমাদের হার্ড কপি দরকার হয়, তখন আমরা সেটা প্রিন্ট করে নেই। প্রিন্টারে রয়েছে প্রচুর কালার অপশন যা দিয়ে খুব সহজেই ও সুন্দরভাবে ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন ছবি প্রিন্ট হয়ে থাকে।
যাইহোক, প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে এটা জানা কিন্তু বেশ জরুরি একটি বিষয়। এর ফলে প্রিন্টার নষ্ট হলে কিংবা পরিচালনা করতে সহজ হয়ে যায়। তাই আজকের এই লেখায় আমরা প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে, এ নিয়ে জানবো।
লেখার সূচিপত্র
প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে?
প্রিন্টারের কাজ করার ধরন খুবই সাধারন। সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রিন্টার ডিজিটাল ছবি ও শব্দকে হার্ড কপিতে রূপান্তর করে থাকে। এই কাজ করার জন্য প্রিন্টার একটি ড্রাইভার বা একটি বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে।
এই সফটওয়্যার এমনভাবে তৈরি যেটি কোন ফাইলকে এমন ভাষায় রূপান্তর করে যেটি প্রিন্টার খুব সহজেই বুঝতে পারে। সেই ছবি বা শব্দ পুনরায় তৈরি হয় এমন সেটি পৃষ্ঠায় সাজানো হয় অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডটের সাহায্যে। এই ডটের উপর ভিত্তি করেই এক এক ধরনের প্রিন্টার এক এক রকম হয়ে থাকে।
প্রিন্টার এমন একটি যন্ত্র যা একটি কম্পিউটার থেকে কোন শব্দ বা কোন ছবিকে কাগজে স্থানান্তরিত করে থাকে। প্রিন্টারের কাগজের সাইজ সাধারনত ৮.৫ থেকে ১১ ইঞ্চি হয়ে থাকে।
প্রিন্টারের আকার, গতি, কাজ করার ক্ষমতা, ব্যয় ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে, প্রিন্টার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
ব্যক্তিগত কাজে যেসব প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলো ইমপ্যাক্ট বা নন ইমপ্যাক্ট দুই ধরনেরই হতে পারে। ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার সাধারনত রিবনের সাথে কাগজের সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে কাজ করে। এটি অনেকটা টাইপরাইটারের মতো।
যেকোন একটি ধাতব বস্তু রিবনে আঘাত করলে সেটি কাগজের বিপরীত পাশে চাপ দেয়ার মাধ্যমে কাগজটিতে লিখা ছাপা হয়। ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার হলো ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার। আর নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই লিখা ছাপা হয়। সবচেয়ে ভালো নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার হলো ইংকজেট প্রিন্টার ও লেজার প্রিন্টার।
বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টার
১. ইংকজেট প্রিন্টার
এই ধরনের প্রিন্টার কালি স্প্রে করার মাধ্যমে কাগজে সুন্দর ছবি তৈরি করে থাকে। এটি সাধারনত ব্যক্তিগত কাজে বেশি ব্যবহার করা হয়। এতে একটি প্রিন্ট হেড থাকে যা হাজার হাজার ছোট ছোট গর্ত বহন করে
- আরও পড়ুন: রাডার কিভাবে কাজ করে?
এগুলো কালির অসংখ্য মাইক্রোস্কোপিক ড্রপলেট তৈরি করে যা কাগজের উপর পড়ে। এই ধরনের প্রিন্টার তরল কালি ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে কালো কালি ও থাকে আবার রঙিন কালিও থাকে। যখন প্রিন্ট হেড নড়াচড়া করে তখন কাগজ এর মধ্য দিয়ে যায়। এই সময় কালি কাগজের উপর পড়ে। এটি খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়ে থাকে যাতে খুব সহজেই একটি ছবি বা কোন তথ্য ছাপা হয়ে যায়।
২. লেজার প্রিন্টার
লেজার প্রিন্টারের কাজও অনেকটা ইংকজেট প্রিন্টারের মতো কিন্তু এটা কালির পরিবর্তে অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লেজার রশ্মি নির্গত করে। এই লেজার রশ্মি নেগেটিভ চার্জ বিশিষ্ট একটি ড্রাম দ্বারা ছবিতে রূপান্তরিত হয়। অফিস আদালতে সাধারণত এই লেজার প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়।
৩. থ্রি ডি প্রিন্টার
এই ধরনের প্রিন্টার নতুন ধরনের প্রযুক্তির উদ্ভাবন। এটি সাধারনত এক স্তরের উপর আরেক স্তর সংযুক্ত হয়ে ছবিটি তৈরি করে থাকে।
৪. থার্মাল প্রিন্টার
এই ধরনের প্রিন্টার সাধারনত তাপের সাহায্যে কাগজে ছবি ফুটিয়ে তোলে। এক বিশেষ ধরনের রঙের সাহায্যে থার্মাল প্রিন্টার থার্মার পেপারে তাপ প্রদান করে থাকে যেটা পরবর্তীতে কালো কালিতে পরিণত হয়।
৫. অল ইন ওয়ান প্রিন্টার
এই ধরনের প্রিন্টারে একই সাথে অনেক ধরনের কাজ করা যায়। যেমন ফটোকপি করা, স্ক্যান করা, ফ্যাক্স করা ইত্যাদি।
৬. এল ই ডি প্রিন্টার
এটা লেজার প্রিন্টারের মতো। প্রিন্ট করার জন্য এটি লাইট এমিটিং ডায়োড ব্যবহার করে থাকে।
৭. ফটো প্রিন্টার
এই ধরনের প্রিন্টার ইংকজেট প্রিন্টারের মতো। কিন্তু এতে প্রিন্ট করতে প্রচুর কালি প্রয়োজন হয়ে থাকে।
প্রিন্টার ক্রয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় বিষয়
সাধারনত একটি প্রিন্টার কেনার সময় নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।
১. কালার: আধুনিক প্রিন্টারগুলোতে কালার প্রিন্টার বেশি হয়। এখানে নিজেদের ইচ্ছা মতো কালো কালি বা রঙিন কালি ব্যবহার করা যায়। কালার প্রিন্টারগুলো বেশি দামি হয়ে থাকে।
২. রেজুলেশন: প্রিন্টারের লিখা বা ছবি কত স্পষ্ট হবে তা নির্ধারণ করে থাকে রেজুলেশন। এটা সাধারনত পরিমাপ করা হয়ে থাকে ডিপিআই (ডট পার ইঞ্চি) দিয়ে। কমদামি প্রিন্টারগুলো সাধারনত মোটামুটি মানের একটি রেজুলেশন দিয়ে থাকে যেটি ৬০০ ডিপিআই।
- আরও পড়ুন: পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে?
৩. গতি বা স্পিড: একটি প্রিন্টার দিয়ে যদি খুব বেশি প্রিন্ট করতে চায় তবে অবশ্যই এর গতির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বল্প দামি প্রিন্টারগুলো সাধারনত এক মিনিটে ৩-৬টি কাগজ প্রিন্ট করতে পারে। যত দামি প্রিন্টার হবে তত বেশি স্পিড হবে।
৪. মেমোরি: প্রায় প্রিন্টারেই একটি মেমোরি থাকে। সাধারনত এটি ২-১৬ মেগাবাইট হয়ে থাকে। ব্যবহারকারী চাইলে এটি বাড়াতে পারে। বড় কোন ছবি প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে এই মেমোরি খুব কাজে লাগে।
৫. ব্লুটুথ এবং ওয়াইফাই: বর্তমান সময়ে ব্লুটুথ এবং ওয়াইফাই কানেকশন থাকা জরুরি। এর ফলে খুব সহজে মোবাইল থেকে প্রিন্ট করা যায়। তাই, প্রিন্টার কেনার সময় অবশ্যই ওয়াইফাই সার্পোট আছে এমন প্রিন্টার কেনা ভাল।
প্রিন্টারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ
একটি প্রিন্টার সাধারনত নিম্নলিখিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত।
১. পেপার সাপোর্ট: যেসব প্রিন্টার কম্পিউটার দ্বারা প্রিন্টিং কমান্ড নিয়ে থাকে সেসব প্রিন্টারেই এই পেপার সাপোর্ট থাকে। এটা সাধারনত কাগজ রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
২. শিট ফিডার: পেপার সাপোর্ট এর নিচে এটি থাকে। এটা সাধারনত খালি কাগজগুলো ধরে রাখতে সাহায্য করে থাকে যখন প্রিন্টার প্রিন্ট করা শুরু করে।
৩. প্রিন্টার কোভ: এটি মূলত প্রিন্টারের কভার। প্রিন্টারকে বাইরের ময়লা ও অন্যান্য সমস্যা থেকে বাচানোর জন্য এটি থাকে।
৪. আউটপুট ট্রে: প্রিন্টিং শেষ হবার পর কাগজ বের হয়ে যেখানে জমা হয় সেটি হলো আউটপুট ট্রে।
৫. আউটপুট ট্রে এক্সটেনসন: আউটপুট ট্রে এর বাড়তি অংশ হচ্ছে এক্সটেনসন ট্রে। এটি সব প্রিন্টারে থাকে না। এটা একটা বাড়তি অংশ। কাগজ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয় তখন এই ট্রে টি কাজে লাগে।
- আরও পড়ুন: মাইক্রোফোন কিভাবে কাজ করে?
৬. কানেকটরস: এটি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সাহায্যে প্রিন্টারে পাওয়ার সাপ্লাই হয়। এটা বুঝা যায় তখন, যখন কম্পিউটার থেকে প্রিন্টার কমান্ড নিয়ে কিছু প্রিন্ট করে থাকে।
৭. এজ গাইড: এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি পেপার সাপোর্ট এর উপরে থাকে। প্রিন্টারের মধ্যে কাগজ ঠিকভাবে রাখতে সাহায্য করে থাকে এটি।
৮. কন্ট্রোল বাটন: প্রিন্টারের উপর একটি বাটন থাকে। সাধারনত যে বাটনটি চোখে পড়ে সেটা হলে অন অফ বাটন। এটি প্রিন্টার অন বা অফ করতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
৯. কার্টিজ কভার: কার্টিজ সকেট এর উপর এই কভার থাকে।
১০. প্রিন্ট হেড: এটি হচ্ছে আরেকটি প্রয়োজনীয় অংশ। এটির সাহায্যে কালি সরবরাহ হয়ে থাকে।
প্রিন্টারের ব্যবহার
প্রিন্টার সাধারনত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার ছাড়াও এটি বিভিন্ন দোকানে, স্কুল, কলেজ, অফিসে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উপসংহার
এই ছিল আজকে, প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে? আশা করি প্রিন্টার নিয়ে আর কোন প্রশ্ন নেই। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে, আমাদের এখানে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।