স্পিকার তো কমবেশি সবাই চিনেন, কিন্তু স্পিকার কিভাবে কাজ করে? এটা কি জানেন। স্পিকার হলো এমন একটি যন্ত্র যা তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গকে শব্দ তরঙ্গে রূপান্তরিত করে। স্পিকার কোন ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেমন কম্পিউটার বা অন্য কোন যন্ত্র থেকে অডিও গ্রহণ করে।
এই অডিও অ্যানালগ বা ডিজিটাল দুই রকমই হতে পারে। অ্যানালগ স্পিকারগুলো খুব সহজভাবে অ্যানালগ তড়িৎচৌম্বকীয় সংকেতকে শব্দ সংকেতে রূপান্তর করে। যেহেতু শব্দ তরঙ্গ অ্যানালগ সিস্টেম থেকে তৈরি হয় তাই ডিজিটাল স্পিকার থেকে শব্দ তরঙ্গ তৈরি হতে হলে ডিজিটাল ইনপুটকে আগে অ্যানালগে রূপান্তরিত হতে হয়।
যাইহোক, ভূমিকায় অনেক বেশী জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হয়ে যাচ্ছে। আমরা মূল আলোচনা স্পিকার কিভাবে কাজ করে সেই খানে চলে যাই।
লেখার সূচিপত্র
স্পিকার কিভাবে কাজ করে?
যখন কোন তড়িৎ প্রবাহ কোন কয়েলের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করে তখন সেখানে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। স্পিকারের মধ্যে এই প্রবাহ একটি ভয়েস কয়েলের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে এবং সেখানে তড়িৎক্ষেত্র তৈরি হয় যা চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত স্থায়ী চুম্বকের সাথে যুক্ত থাকে।
আয়নসমূহ একটি অপরটি থেকে আলাদা হয়ে নতুন আয়নের সাথে বন্ধন তৈরি করে। অডিও সংকেত ভয়েস কয়েল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সুর তরঙ্গগুলো উপরে নিচে উঠা নামা করে। এভাবে কোণের সাথে এটি যুক্ত হয়ে এবং উচ্চস্বরে শব্দ সৃষ্টি হয় যা আমরা বাইরে শব্দ হিসেবে শুনতে পাই।
এছাড়া, আপনি চাইলে মাইক্রোফোন কিভাবে কাজ করে? লেখাটি পড়তে পারেন।
যেসব যন্ত্রের সাহায্যে স্পিকারে শব্দ সৃষ্টি হয়
১. স্থায়ী চুম্বক
স্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করা হয়ে থাকে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করার জন্য যেটা ভয়েস কয়েলকে বেষ্টন করে রাখে।
২. ভয়েস কয়েল ও ববিন
ববিন হচ্ছে এক ধরনের গোলাকার টিউব আকৃতির যন্ত্র যা কোণের নিচে থাকে। একটি লম্বা ও শক্ত তারের কয়েল যাকে ভয়েস কয়েল নামে পরিচিত। এটি তড়িৎক্ষেত্র তৈরি করে থাকে যা তড়িৎ প্রবাহিত করে থাকে। এর কারণে সুর সংকেত অ্যামপ্লিফায়ার দ্বারা বের হতে পারে।
৩. স্পাইডার বা সাসপেনশন
এটি হচ্ছে জালের মতো দেখতে একটি অংশ। এটি ভয়েস কয়েল ও ববিনকে সাপোর্ট দিয়ে রাখে। এর সাহায্যে কোণ সঠিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে।
৪. কোণ ( ডায়াফ্রাম ) এবং ডাস্ট ক্যাপ
এটি দেখতে একটি কোণ আকৃতির যন্ত্রাংশ যেটি চুম্বক ও ভয়েস কয়েল দুইটার মধ্য দিয়েই চলাচল করতে পারে এবং বাতাস ও শব্দ তৈরি করতে পারে। ডাস্ট ক্যাপ হচ্ছে একটি পাতলা যন্ত্রাংশ যা দেখতে একটি বোতলের ক্যাপের মতো। এটি উপরের খোলা অংশকে ময়লা ও ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে।
- আরও পড়ুন: পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে?
৫. স্পিকার বাস্কেট
স্পিকার বাস্কেট হলো কাস্ট ধাতু দিয়ে তৈরি একটি কাঠামো যাতে স্পিকারের সমস্ত যন্ত্রাংশ সংযুক্ত থাকে।
৬. স্পিকার টারমিনালস
স্পিকার টারমিনালস হলো এক ধরনের সংযোজক যা স্পিকারের তারকে স্পিকারের সাথে যুক্ত করে। এটা ভয়েস কয়েলকে একটি নমনীয় তারের সাথে যুক্ত রাখে যেটি কোণের মধ্যে নাড়াচাড়া করতে পারে।
৭. আবরণী
এটি রাবার বা ফোমের তৈরি এক ধরনের পদার্থ। এটি মজবুত ধরনের হয় এবং বাস্কেটের উপরের প্রান্তে আটকানো থাকে।
স্পিকার কিভাবে কাজ করে তা ধাপে ধাপে দেয়া হলো
১. একটি ভোল্টেজ একটি সুর তরঙ্গ সৃষ্টি করে থাকে। তড়িৎচৌম্বক প্রবাহ স্পিকারের ভয়েল কয়েলের মধ্য দিয়ে ধনাত্বক প্রান্ত থেকে ঋণাত্বক প্রান্তে গমন করে।
২. একটি চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয় ভয়েস কয়েলের চারপাশে এবং একই সাথে স্পিকার বাস্কেটের সাথে একটি স্থায়ী চুম্বক মেরু তৈরি হয়।
৩. ডায়াফ্রাম বা কোণ সামনে পিছনে নড়াচড়া শুরু হয় এবং বাতাসের চাপ সৃষ্টির দ্বারা শব্দ তৈরি করে।
৪. তড়িৎ সংকেতের সাহায্যে ভোল্টেজ বাড়তে থাকে এবং সুর সংকেত উপরে উঠতে থাকে। আস্তে আস্তে প্রবাহ বাড়তে থাকলে ভয়েস কয়েলও চুম্বকক্ষেত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকে।
৫. এর কারণে কোণ সামনে পিছনে নড়াচড়া করে।
৬. এই সংকেত উচ্চস্বরে আউটপুট পয়েন্ট দিয়ে বের হয়। প্রবাহ আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং কোণ আবার আগের অবস্থানে অর্থাৎ জিরো ভোল্টেজে ফিরে আসে।
৭. এই সংকেত শূণ্যতে পৌছায়। এই অবস্থায় একে জিরো ভোল্টেজ ক্রসওভার থ্রেসহোল্ড বলা হয়ে থাকে। কোণ যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানে ফিরে যায়।
৮. তড়িৎ সংকেত পুনরায় শুরু হয় এবং নেগেটিভ ভোল্টেজে পরিবর্তন হয়। যখন এটি হয় তখন বিদ্যুৎ প্রবাহ নেগেটিভ ভয়েস কয়েল থেকে পজিটিভ দিকে প্রবাহিত হয়।
৯. ভয়েস কয়েল এবার স্থায়ী চুম্বকের বিপরীতে আকর্ষিত হয় এবং কোণের নড়াচড়া পিছন থেকে সামনে হবার বদলে সামনে থেকে পিছনে শুরু হয়।
১০. সংকেত শুরু হবার সাথে সাথে কোণ পেছনে নড়া শুরু হয়। শব্দ সংকেতের সাথে সাথে বাতাসের নড়াচড়া শুরু হয়।
১১. অবশেষে আউটপুট আবার শূণ্যতে ফিরে যায়। এবং এভাবে পুনরায় চক্রটি শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে চলতে চলতে থাকে।
এক কথায় বলতে গেলে স্পিকার হচ্ছে এক ধরনের ইলেকট্রিকাল মটর যা তড়িৎ সংকেতকে গ্রহণ করে এবং বাতাসের নড়াচড়ার মাধ্যমে সুর সংকেত তৈরি করে প্রকাশ করে থাকে।
নিচে কয়েক ধরনের স্পিকারের নাম দেয়া হলো
১. ব্লুটুথ স্পিকার
এখন অনেক যন্ত্রে ব্লু-টুথ প্রযুক্তিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই স্পিকারটি সহজেই বহনযোগ্য। এটি মোবাইল, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে সংযোগ দিয়ে মিউজিক প্লে করা যাবে। এতে একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি থাকে।
২. ওয়্যারলেস স্পিকার
এই স্পিকারগুলো রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। তারবিহীন হবার কারণে এটি বহনে সুবিধা ও জায়গা ও কম দখল করে থাকে। ব্লুটুথ স্পিকার থেকে এর বিবর্ধন ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে।
- আরও পড়ুন: আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে।
৩. বিল্ট ইন স্পিকার
টেলিভিশন, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রে এই স্পিকার সংযুক্ত থাকে। এই স্পিকার দিয়ে শোনা যায় ঠিকমত কিন্তু কখনো কখনো এটি পর্যাপ্ত হয় না। এই জন্য অনেক সময় আলাদা স্পিকারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
৪. সাবউফার
এটা কম তরঙ্গের একটি স্পিকার যেটির ক্ষমতা ৮০ হার্জ হয়ে থাকে। খুব কম তরঙ্গ প্রতিলিপি তৈরি করতে সাবউফার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৫. উফার
এর ক্ষমতা ৮০-১০০০ হার্জের মধ্যে হয়ে থাকে। সাধারনত হোম সিনেমায় এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৬. মিডরেঞ্জ স্কোয়াকার
এটি সাধারনত ২৫০ থেকে ২০০০০ হার্জের মধ্যে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়াও রয়েছে হাই ফ্রিকোয়েন্সি লাউডস্পিকার, সাউন্ডবারস ও ইলেকট্রোস্ট্যাটিক লাউডস্পিকার।
উপসংহার
তো স্পিকার কিভাবে কাজ করে, এই বিষয়টি কি পরিষ্কার হয়েছে? যদি কোন বিষয়ে খটকা থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আর আপনি যদি প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে? না জানেন, তাহলে এই লেখাটি পড়তে পারেন।