আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো পুলিশ ভেরিফিকেশন কি? পুলিশ ভেরিফিকেশন করার নিয়ম ও পুলিশ ভেরিফিকেশন চেক করার নিয়ম। লেখাটি হয়তো কিছুটা বড় হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়েন। তাহলে, অন্যের সহযোগিতা ছাড়া আপনি নিজেই পুলিশ ভেরিফিকেশন করে ফেলতে পারবেন।
লেখার সূচিপত্র
পুলিশ ভেরিফিকেশন কি?
সাধারন কেউ যখন সরকারি চাকরি, লাইসেন্স, পাসপোর্ট এবং এরকম কোন কিছু যখন করতে চায়, তাদের দেয়া সমস্ত তথ্য সঠিক কি না, তা যাচাই করার জন্যই এই পুলিশ ভেরিফিকেশন। এই পুলিশ ভেরিফিকেশন জনসাধারণের (যারা এটা পেয়ে থাকেন) চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন তা বহন করে।
ভেরিফিকেশন বলতে বোঝায় সত্যতা যাচাই। যারা এই চাকরি বা পাসপোর্ট বা এ জাতীয় কোন কিছুতে আবেদন করবেন, তাদের দেয়া সকল তথ্য সঠিক কি না, তা যখন পুলিশ কর্তৃক চেক করা হয়, তখন তাকে বলা হয় পুলিশ ভেরিফিকেশন। আর তারা শুধু সত্যতাই যাচাই করেন না। এর পাশাপাশি ব্যাক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তার নামে কোন মামলা আছে কিনা, ক্রিমিনাল রেকোর্ড আছে কিনা ও তার সামাজিক অবস্থানের দিকগুলো সম্পর্কেও তথ্য গ্রহন করেন।
কোথায় বা কোন ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়?
- সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ।
- আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে।
- স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ।
- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ।
- পাসপোর্টের ক্ষেত্রে।
- লাইসেন্স এর জন্য (ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অস্ত্রের লাইসেন্স এর জন্য)।
- বৃহৎ কেনো স্থাপনার জন্য (কেপিআই)।
পুলিশ ভেরিফিকেশন আবেদন ফর্ম
আপনারা পুলিশ ভেরিফিকেশন আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে পারেন। তবে তা কীভাবে পূরন করবেন, তা নিচের সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে বুঝে নিতে পারেন। এখানে লিংক দিয়ে দিচ্ছি-
পুলিশ ভেরিফিকেশন করার নিয়ম
অনেকেই জানেন না, পুলিশ ভেরিফিকেশন করার নিয়ম। এই আবেদন অনাইন বা অফলাইন দুইভাবেই করা যায়। তবে সবচেয়ে সহজ হলো অনাইনে আবেদন করা। আর আপনি যদি অফলাইনে আবেদন করতে চান, তাহলে আপনার বাড়ির পাশের নিকটস্থ পুলিশ অফিসে যান। সেখনে তারা আপনাকে কীভাবে আবেদন করতে হবে, তা সম্পর্কে বিস্তারিত বলে দেবেন।
অনলাইনে আবেদন
কীভাবে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করবেন তা নিচে আলোচনা করা হলো।
রেজিস্ট্রেশন
সর্বপ্রথম আপনার কাজ হলো পুলিশদের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করা। লিংকটি আমি আপনাদের সুবিধার্থে দিয়ে দিচ্ছি- http://pcc.police.gov.bd:8080/ords/f?p=PCC:REGISTRATION:::NO:RP,4:::::।
এই লিংকে গিয়ে আপনার নাম, ইমেইল অ্যাড্রেস বা ফোন নম্বর, ভোটার আইডি কার্ড নম্বর, নতুন একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। তারপর আপনি যদি বিদেশী হন বা বাচ্চা হন, তবে তো আপনার ভেটার আইডি কার্ড থাকবে না।
তাই সে ঘরের পাশের ফরেইন/ চাইল্ড ( Foreign / Child ) বাটনে ক্লিক করুন। এরপর একদম নিচে অবস্থিত Continue বাটনে ক্লিক করুন। এতে আপনার রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লিট। এরপর আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেল।
অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই
আপনার অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই না হলে, সেই অ্যাকাউন্ট দিয়ে কিন্তু কোনো প্রকার কাজ করা যাবে না। আপনি দুইটি উপায়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে পারেন। প্রথমত, আপনার ফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ২৬৯৬৯ নম্বরে আপনার তথ্যাদি পাঠিয়ে দিন। এতে আপনার অ্যাকাউন্টটি সত্যায়িত হবে।
দ্বিতীয়ত, আপনার ইমেইল অ্যাকাউন্টের সাহায্যে। ইমেইল নিশ্চিতকরনের জন্য সেখানে এলটি লিংক আসবে এবং সে লিংকে ক্লিক করলে অটোমেটিকলি আপনার অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হয়ে যাবে।
এবার অ্যাকাউন্ট দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
ধাপ ১: ব্যাক্তিগত তথ্য
এই ধাপে আপনাকে আপনার সকল প্রকার ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে হবে। যেমন আপনার নাম, ফোন নম্বর এসব তথ্য। সব তথ্য পুলিশের ডেটাবেজে জমা দিতে হবে। এখানে আপনার পাসপোর্ট নম্বর সাবধানতার সাথে পূরন করতে হবে। এরপর আপনাকে রেফারেন্স নম্বর দেয়া হবে। সেই কোডটি অনকে গুরুত্বপূর্ণ। পরে আপনাকে যখন হেল্প লাইন থেকে কল করা হবে তারা আপনার কাছে এই কোড জানতে চাইবেন।
ধাপ ২: ব্যাক্তিগত ঠিকানা
আপনাকে এই ধাপে আপনার স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা দিতে হবে। এখানে একটা বিষয় লক্ষ করতে হবে যে, আপনার পুরোটা আবপদন প্রকিয়া কিন্তু বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী সম্পন্ন হবে, আর আপনি যদি চান যে প্রক্রিয়াটি স্থায়ী ঠিকানার মাধ্যমে সম্পন্ন হোক, তবে স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা এই দুইটিই এক লিখুন।
ধাপ ৩: ডকুমেন্টস জমা দেয়া
আপনার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এখানে জমা করতে হবে। আপনাকে তার স্ক্যানকপি আপলোড করতে হবে। আর এখানে আপনি ১৫০ কিলোবাইটের কম সাইজের ছবি আপলোড করবেন। অনেক সময় দেখা যায় অনেকের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। ‘আপলোড ফেইলড’ অপশন দেখা যায়। তখন কারন হয় মূলত, ছবির সাইজ ১৫০ কিলোবাইট এর থেকে বেশি হয়।
ধাপ ৪: কনফার্মেশন
এই ধাপে আপনি আগে যেসব তথ্য প্রদান করেছেন তা সবগুলো আপনার সামনে আসবে। এরপর সম্পূর্ণটা আপনাকে খুঁটিয়ে দেখতে হবে যে বানানে ভুল আছে কিনা বা কোনো তথ্য ভুল দিয়েছন কি না। এরপর যদি কোনো ভুল দেখতে পান তবে ‘Back’ বাটনে ক্লিক করুন এবং ঠিক করে নিন। এবং ভুল না পেলে Continue বাটনে ক্লিক করুন বা Submit করুন।
ধাপ ৫: আবেদন ফি
এরপর আপনাকে এই পুলিশ ভেরিফিকেশন এর জন্য পেমেন্ট করতে হবে। আর আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত পেমেন্ট না করবেন ততক্ষণ পুলিশ কর্তৃক আপনার আবেদন ভেরিফিকেশন শুরু হবে না। আবেদন ফি- ৫০০ টাকা। এটাকে চালান বলে। এই টাকা আপনি দুইটি মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন।
ব্যাংকের মাধ্যমে: আপনি এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে সোনালী ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোনো একটি শাখা থেকে ১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১ এই কোড নম্বর থেকে ৫০০ টাকা পে করতে হবে।
ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড: আপনি ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যেও পে করতে পারেন। তখন আপনাকে ফর্মে কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। এগুলো হলো-
- ব্যাংকের নাম
- ব্যাংকের বিভাগ
- শাখা
- চালানের ডিটেইলস
- স্ক্রল নম্বর
- এর সাথে আপনাকে চালান কপির ৩০০ কিলোবাইটের একটি ছবি আপলোড করতে হবে।
এরপর ‘চেক চালান ‘ বাটনে ক্লিক করতে হবে। তবে, আপনি চাইলে এই টাকা পরেও পরিশোধ করতে ওারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে PCC এর সাইটে লগ ইন করে My Account এ ক্লিক করতে হবে। সেখানে ড্যাশবোর্ড এ Pending for payment এ ক্লিক করলেই হবে।
এভাবে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এর কদিনের মধ্যেই আপনি পেয়ে যাবেন পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।
পুলিশ ভেরিফিকেশন চেক করার নিয়ম
আপনার করা আবেদনটি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা চেক করার জন্য আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করুন। সেখানে একদম নিচে দেখতে পাবেন আপনার আবেদন করার প্রক্রিয়াটি কোন পর্যায়ে রয়েছে।
যদি আপনার আবেদন প্রক্রিয়া টি এখনো চলতে থাকে তবে পেন্ডিং কিংবা যদি হয়ে যায় তবে Done লেখাটি আপনি দেখতে পাবেন। এভাবে আপনি সবসময় আপনার আবেদন প্রক্রিয়া চাইলেই দেখতে পাবেন অর্থাৎ চেক করতে পারবেন। এর ১০ দিনের মাথয় আপনি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।
পরিশেষে
আমরা সকলেই ধীরে ধীরে বড় হই, এবং একসময় প্রয়োজন পড়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট এর। তাই আগে থেকেই এ সম্পর্কে ভালেভাবে ধারনা রাখা উত্তম। আশা করি, আজকের লেখাটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে, কাজে আসবে আর আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন।